History of hajj

হজ্জ

হজ্ব বা হজ্জ বা হজ (আরবি: حج‎‎) ইসলাম ধর্মাবলম্বী অর্থাৎ মুসলমানদের জন্য একটি আবশ্যকীয় ইবাদত বা ধর্মীয় উপাসনা। এটি ইসলাম ধর্মের চতুর্থ স্তম্ভ। শারীরিক ও আর্থিকভাবে সক্ষম প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য জীবনে একবার হজ সম্পাদন করা ফরজ বা আবশ্যিক। আরবি জিলহজ মাসের ৮ থেকে ১২ তারিখ হজের জন্য নির্ধরিত সময়। হজ পালনের জন্য বর্তমান সৌদি আরবের মক্কা নগরী এবং সন্নিহিত মিনা, আরাফাত, মুযদালিফা প্রভৃতি স্থানে গমন এবং অবস্থান আবশ্যক। এটি পৃথিবীর বাৎসরিক তীর্থযাত্রা।[৬] শারীরিক ও আর্থিকভাবে হজ পালনে সক্ষম হয়ে ওঠার অবস্থাকে ইস্তিতাহ বলা হয় এবং যে মুসলমান এই শর্ত পূরণ করে তাকে মুস্তি বলা হয়। হজ হ’ল মুসলিম জনগণের সংহতি, এবং আল্লাহর নিকটে তাদের আনুগত্যের প্রদর্শনী। যিনি হজ সম্পাদনের জন্য গমন করেন তাকে বলা হয় হাজী। হজ শব্দের অর্থ “একটি যাত্রায় অংশ নেওয়া”, যা ভ্রমণের বাহ্যিক কাজ এবং উদ্দেশ্যগুলির অভ্যন্তরীণ কাজ উভয়কেই বোঝায়।

ইতিহাস

হজের বর্তমান প্যাটার্নটি মুহাম্মদ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।তবে কুরআন মতে হজের উপাদানগুলি ইব্রাহিমের সময়ে পাওয়া যায়। ইসলামী ঐতিহ্য অনুসারে, ইব্রাহিম তাঁর স্ত্রী হাজেরা ও তাঁর পুত্র ইসমাইলকে প্রাচীন মক্কার মরুভূমিতে একা রেখে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। জলের সন্ধানে হাজারা মরিয়া হয়ে সাফা ও মারওয়ার দুটি পাহাড়ের মধ্যে সাতবার দৌড়েছিল কিন্তু কিছুই পেল না। হতাশায় ফিরে ইসমাইলের দিকে, সে দেখতে পেল যে, শিশুটি তার পা দিয়ে মাটিতে আছড়ে পড়ছে এবং তার পায়ের নীচে একটি জলের ঝর্ণা প্রবাহিত হয়েছে।পরে ইব্রাহিমকে কাবা (যা তিনি ইসমাইলের সহায়তায় করেছিলেন) তৈরি করার এবং লোকদের সেখানে হজ্জ আমন্ত্রণ করার আহ্বান জানান।কুরআন 2:124–127 এবং 22:27–30 আয়াতগুলিতে এই ঘটনাগুলির উল্লেখ রয়েছে। জিবরাঈল কাবার সাথে সংযু জন্য জান্নাত থেকে হাজরে আসওয়াদ পাথর এনেছিলেন।

মধ্যযুগীয় সময়ে, তীর্থযাত্রীরা সিরিয়া, মিশর এবং ইরাকের বড় শহরগুলিতে মক্কায় যাওয়ার জন্য দলে দলে কয়েক হাজার তীর্থযাত্রীর দল এবং কাফেলায় জড়ো হত, যা প্রায়শই রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় হতো।হজ কাফেলাগুলি, বিশেষত মামলুক সালতানাত এবং এর উত্তরাধিকারী অটোমান সাম্রাজ্যের আবির্ভাবের সাথে সাথে একজন আমির আল-হজ্জের নেতৃত্বে চিকিত্সক এবং সামরিক বাহিনী নিয়ে হজ্জে যেতেন।

ইসলামে হজ্জের গুরুত্ব

আবু হোরায়রা বর্ণিত এক হাদিসে ইসলামের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য হজ করে এবং অশ্লীল ও গোনাহের কাজ থেকে বেঁচে থাকে, সে হজ থেকে এমতাবস্খায় ফিরে আসে যেন আজই মায়ের গর্ভ থেকে বের হয়েছে। অর্থাৎ জন্মের পর শিশু যেমন নিষ্পাপ থাকে, সেও তদ্রূপই হয়ে যায়।”আরেকটি হাদিসে তিনি বলেছেনঃ “শয়তান আরাফার দিন হতে অধিক লজ্জিত ও অপদস্থ আর কোনো দিন হয় না, কেননা ওই দিন আল্লাহতায়ালা স্বীয় বান্দার প্রতি অগণিত রহমত বর্ষণ করেন ও অসংখ্য কবিরা গুনাহ ক্ষমা করে দেন।” তিনি আরো বলেছেনঃ “একটি বিশুদ্ধ ও মকবুল হজ সমগ্র পৃথিবী ও পৃথিবীর যাবতীয় বস্তুর চেয়ে উত্তম। বেহেস্ত ব্যতীত অন্য কোনো বস্তু তার প্রতিদান হতে পারে না।

অর্থ

ইসলামের বর্ণনা অনুসারে হজ্ব একটি আবশ্যকীয় বা ফরজ উপাসনা। এটি ইসলামের ৪র্থ স্তম্ভ। হজ্ব শব্দের আভিধানিক অর্থ “ইচ্ছা” বা “সংকল্প” করা। আচার ও আদব-কায়দার বিবেচনায় হজ্ব হলো বৎসরের নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট পোশাকে কয়েকটি স্থানে অবস্থান বা ওকুফ, ক্বাবা শরীফের তাওয়াফ, পশু কোরবানী, নির্দ্দিষ্ট স্থানে পরপর ৩দিন কংকর নিক্ষেপ এবং সাফা-মারওয়া টিলাদ্বয়ের মধ্যে হাঁটা।

হজ্বের শর্তাদি

হজ্বে গমনের জন্য মুসলমানদের কিছু নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করতে হয়। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল আর্থিক এবং শারীরিক সামর্থ্য।

নারীদের জন্য মাহরাম

ইসলামী সূত্রানুযায়ী আর্থিক এবং শারীরিক সামর্থ্য ছাড়াও নারীদের জন্য তৃতীয় একটি শর্তের উল্লেখ করা হয়, সেটি হলো হজে যাওয়ার জন্য নারীকে স্বীয় স্বামী অথবা মাহরাম পুরুষকে সঙ্গে নিতে হয়। যাদের মাহরাম নেই তাদের হজে যাওয়ার ধর্মীয় বাধ্যবাধকতা নেই। মাহরাম ব্যতীত হজের জন্য নারীদের সৌদি আরবের ভিসা প্রদান করা হয় না। বলা হয়, যদি মাহরাম ব্যতীত হজ করতে যায় তাহলে হজ হয়ে যাবে, কিন্তু মাহরাম ব্যতীত সফরের জন্য গুনাহগার বা পাপী হবে।

হজের রীতি-নীতি

ফিকহ সাহিত্যে হজের আচার অনুষ্ঠানের বিশদ বর্ণনা করা হয়েছে এবং হজযাত্রীরা সাধারণত হজের প্রয়োজনীয়তা সফলভাবে সম্পাদনের জন্য হ্যান্ডবুক এবং বিশেষজ্ঞ গাইড অনুসরণ করেন।হজের নিয়মাবলী সম্পাদন করতে গিয়ে, তীর্থযাত্রীরা কেবল মুহাম্মদের আদর্শ অনুসরণ করেন না, ইব্রাহিমের সাথে সম্পর্কিত ঘটনাগুলিও স্মরণ করেন।

ইহরাম

হজ্বকালীন সার্বিক অবস্থাকে বলা হয় ইহরাম যার প্রধান চিহ্ন হলো দুই খণ্ড সেলাইবিহীন সাদা কাপড় পরিধান। এটি পুরুষের জন্য দুটি সাদা সেলাইবিহীন কাপড় পরা থাকে, যার একটি কোমরের চারপাশে জড়িয়ে জড়িয়ে হাঁটুর নীচে পৌঁছে অন্যটি বাম কাঁধের উপর দিয়ে টানা হয় এবং ডানদিকে বাঁধা থাকে; মহিলাদের জন্য সাধারণ পোশাক পরা যা হাত ও মুখ উন্মুক্ত করে প্রকাশ্য পোশাকের ইসলামিক শর্ত পূরণ করে; ইহরাম-এর নির্দ্দিষ্ট স্থানকে বলা হয় মিকাত। হজ্বের সময় তালবিয়াহ নামক দোয়া পাঠ করা হয়। এটি নিম্নরূপ:

তালবিয়াহ হলো-‘লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইকা, লাব্বাইকা লা-শারীকা লাকা লাব্বাইকা। ইন্নাল হামদা ওয়ান নেয়ামাতা লাকা ওয়াল মুলকা লা-শারীকা লাকা। এর অর্থ হলো, হে আল্লাহ, আমি হাজির আছি, আমি হাজির আছি। আপনার কোনো শরীক নেই, আমি হাজির আছি। নিশ্চয় সকল প্রশংসা ও নেয়ামত আপনারই এবং সমগ্র বিশ্বজাহান আপনার। আপনার কোনো শরীক নেই।

তাওয়াফ

ক্বাবা শরীফের দক্ষিণ-পূর্ব থেকে শুরু করে একাদিক্রমে ৭বার ক্বাবা শরীফ প্রদক্ষিণ করাকে ইসলামে তাওয়াফ বলা হয়ে থাকে।আল-মসজিদ আল-হারাম পৌঁছে তীর্থযাত্রীরা ওমরাহর অংশ বা স্বাগত তাওয়াফ হিসাবে আগত তাওয়াফ করেন।

মুসলমানদের জন্য এটি হজের একটি অপরিহার্য অঙ্গ।

বিভিন্ন প্রকার হজ্ব

হজ্জ সম্পাদনের রীতি-নীতি অভিন্ন হলেও মক্কা নগরীতে গমনের সময় এবং হজ্জ ও উমরাহ পালনের পরম্পরার ভিন্নতার জন্য হজ্জ তিন প্রকার হতে পারে। এগুলো হলো হজ্জে এফরাদ, হজ্জে কেরান এবং হজ্জে তামাত্তু। হজ্জ তিন প্রকার—তামাত্তু, কিরান ও ইফরাদ।

হজে তামাত্তু হজের মাসসমূহে (শাওয়াল, জিলকদ, জিলহজ) উমরাহর নিয়তে ইহরাম করে, উমরাহ পালন করে, পরে হজের নিয়ত করে হজ পালন করাকে ‘হজে তামাত্ত’ু বলে।

হজে কিরান হজের মাসসমূহে একই সঙ্গে হজ ও উমরাহ পালনের নিয়তে ইহরাম করে উমরাহ ও হজ করাকে ‘হজে কিরান’ বলে।

হজে ইফরাদ শুধু হজ পালনের উদ্দেশ্যে ইহরাম বেঁধে হজ সম্পাদনকে ‘হজে ইফরাদ’ বলে।

Call Us:

Email Us:

Whatsapp:

Social: